মাত্র যেন পায়ের তলা থেকে পাটাতন সরে গেল
আমি ঝুলে আছি পৃথিবীর একশোটি বীভৎস ফাঁসির কাষ্ঠে,
আমার দম বন্ধ হয়ে আসছে
হাত পায়ের রগগুলো টান দিয়ে যাচ্ছে যেন সহস্র দোযখের ফেরেস্তা।
এইমাত্র যেন অজস্র বোমারু বিমানের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র বুলেট আমার হৃদপিন্ড ছিন্নবিচ্ছিন্ন করে দিচ্ছে,
শরীরের রক্ত কণিকাগুলো বাঁধভাঙা ঢেউয়ের মতো লাফিয়ে লাফিয়ে ছুটে আসছে বুলেট গিলতে,
মৃত্যুদূত আমার দিকে তাকিয়ে হেসে যাচ্ছে কালবৈশাখীর বাতাসের মতো।
আমার সামনে দাঁড়িয়ে আছে আমার সব অতীত।
আমি নিরুপায়, বানের স্রোতে পড়া পিঁপড়ের মত অসহায় দৃষ্টি নিয়ে শুধু তাকিয়ে থাকার স্রোতে ভাসছি।
অথচ এই ক’দিন আগেও টগবগিয়ে পৃথিবীর বুকে দাপিয়ে বেড়িয়েছি দুরন্ত ঘোড়ার মতো,
কাকে মাড়িয়ে গেলাম, কাকে ছাড়িয়ে গেলাম
কার ভেঙেছি আইল, কার ক্ষেতে লাগিয়েছিল মুখ,
কখনোই হিসেব করিনি।
আজ আমি নিদারুণ শুকনো পাতার মতো-
ইচ্ছের সবুজ প্রাণ ধূসরের বুকে বিলীন হয়ে গেছে ।
আমি যখন মানুষ নামের প্রাণীগুলির কাঁধের উপরে পা তুলে সমস্ত অনিয়মকে নিয়মের খাতায় লিপিবদ্ধ করছি আর স্রষ্টাকে দেখিয়েছি বৃদ্ধাঙ্গুলি,
তখনো আমি জানতাম আমার অবধারিত মৃত্যু কথা,
আমি স্রষ্টা মানিনি, মানুষ মানিনি
মানিনি নিজেকে ছাড়া আর কাউকে;
আমার পেছনে ঝাঁকবাধাঁ কাকের মত সারি সারি সুঠাম দেহি অশ্বারোহীর দল আজ কোথায়?
ধূলির চেয়ে ক্ষুদ্র এই কী একটা আমাকে অনন্ত মৃত্যুর আস্বাদ দিয়ে যাচ্ছে ।
আমার চোখের কিনারে জমে উঠেছে সারাজীবনের অপরাধবোধের অর্থহীন একফোঁটা অনুশোচনা।