বধূ

0
302

“বধূ কোন আলো লাগলো চোখে” প্রিয় গানের কলি, আমার মতো অনেকের। কিন্তু পঞ্চাশ বছর বয়সি এক পুরুষ যখন তার পতিতা বধূকে এভাবে প্রতি রাতে গান গেয়ে বরণ করে তাহলে সত্যিই…

মধ্যবিত্ত ঘরের মেয়ে তানিয়া, বয়স পাঁচ বছর। ঘরে মা-বাবা আর ছোট্ট তানিয়া। নেই অভাব, নেই গণ্ডগোল, নেই কোনো ঝগড়াঝাঁটি। সবকিছুই চলছে তার সৃষ্টির নিয়মেই। আমরা বলি ‘বিধির লিখন কখনো খণ্ডানো যায় না।’ আসলে কি তাই? বিধি কি তানিয়ার ভাগ্যে তাই লিখেছিল সে একদিন হবে সমাজের বা স্বাধীন বাংলাদেশের এক পতিতা বধূ। পাঁচ বছরের তানিয়া ছিল বাবা-মায়ের স্বপ্ন। ছোট সেই শিশু বয়স, যেন সব সময় ঘুরতে খেলতে আর আনন্দে থাকতে চায়। সে তো জানত না তার বিধি কী লিখেছিল। যদি জানত তাহলে হয়তো গর্ভধারিণী মাকে বলত মা তুমি সন্তানের জননী হয়ো না। মা তুমি আমার জননী হয়ো না। কিন্তু অবুঝ তানিয়া পারেনি কাউকে কিছু বলতে। তবে মানুষ হয়ে না, পতিতা হয়ে তানিয়া বলেছে-

‘ডাক্তার সাহেব আমার মা হওয়ার ক্ষমতা বন্ধ করে দিন। আমি মা হতে চাই না, আরেকটি পতিতার মা হতে চাই না’।
নিজের জীবনের কলুষিত দিনগুলোর কথা বলতে গিয়ে একবারও বুক কাঁপেনি বা চোখে লজ্জা আসেনি তানিয়ার। সব শেষে তানিয়া বলেছে,
– জানেন মানুষ বলে আমরা পতিতা, কই কোনো পুরুষকে তো বলা হয় না দেহকর্মী।
তখন তানিয়ার সামনে দাঁড়িয়ে বলেছি-
– না তুমি দেহকর্মী না তুমি হলে আমার দেখা এক রক্তকরবী। আজ আমি দাঁড়িয়ে তোমায় স্যালুট করি। তুমি আছ বলে তোমরা আছ বলে এই সমাজে আমরা ভদ্র নারীরূপে বেঁচে আছি। তোমরা আছ বলে সমাজের কিছু হাতে গোনা নরপশুর হাত থেকে আমরা বেঁচে আছি। জানি আমাদের এই সমাজ তোমাদের পুরস্কৃত করবে না, তোমাদের আমরা স্যালুট করি। তোমরা তো একেক বার একেকরূপে আমজনতার সামনে, তবে এইরূপ অন্যকে ধোঁকা দেয়ার জন্য নয়। কাউকে ধর্ষণ করার জন্যে নয়। শুধু অর্থের বিনিময়ে অন্যের কামনা আর লালসা মেটানোর দায়িত্ব পালন করছো। আচ্ছা তানিয়া তুমি কি আজ আমায় বলবে তোমার সব কথা। যদি সবটুকু বলতে পার তাহলেই বলবে।

নিজের ভেতরের রাগ, জেদ, হিংসা, কলুষতাকে চেপে ধরে চুপ থাকতে পারেনি তানিয়া। অনর্গল বলতে শুরু করল-
– আপা সবটুকু শুনতে পারবেন তো। নাকি ওদের মতো আপনি আমাকে মাঝনদীতে ভাসিয়ে দিয়ে চলে যাবেন।
– না আমি অর্ধেক শুনে পালিয়ে যাবো না, আজই প্রমাণ হবে আমরা কে আর ওরা কারা?

পাঁচ বছর বয়সে আমার মা মারা যায়। মায়ের মৃত্যুর ২ মাস পর বাবা বিয়ে করে আমার জন্যে নতুন মা নিয়ে আসেন। বাবা আমায় ভালোবাসে, আমার জন্য ঘরে নতুন মা এনেছে। কিন্তু তখন ভাবনায় একবারও আসেনি আমার বাবা একজন পুরুষ, উনার একটা নারীর প্রয়োজন। বছর ঘুরতে ঘুরতে ২টা বাচ্চা আসে নতুন মায়ের কোলে। আমাদের পরিবারে খাবার-দাবারের কোনো অভাব ছিল না। বুঝতে পারিনি সংসারে আমার মমতার অভাব হবে। ছোট ভাইবোনদের দেখাশোনার জন্য আমার পড়ালেখা বন্ধ হয়ে যায়। এভাবে যেতে যেতে আমার বয়স দশ বছর হলো। বাবা তার বৌ বাচ্চাদের নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। আমি আছি ছাগলের তিন নাম্বার বাচ্চার মতো। সংসারে আছি, এর চেয়ে বেশি কিছু জানতে চায়নি আমার জন্মদাতা। কিছু হলেই নতুন মা আমার গায়ে হাত উঠাত। বাবাকে বলতে গিয়েও বাধা পেয়ে বলার সাহস পাইনি। দু-এক বার বলে কোনো লাভ হয়নি।

বধূ তানিয়ার চোখ ভরা পানি। আমিও ঠাঁয় তাকিয়ে আছি ওর দিকে। বয়স আমাদের দু’জনার খুব কাছাকাছি।

– সমস্যা নেই, চোখের জল কমেনি যখন এতো বছরে, আর কমবেও না। শুনেন আমার নির্বাসিত সেই দিনটির কথা।

সকালবেলায় রান্নাঘরে ঢুকে দেখি বিড়াল পাতিল থেকে দুধ খাচ্ছে। আমি বিড়াল তাড়িয়ে দিই। একটু পরে নতুন মা ছোট ভাই বোনদের জন্য দুধ নিতে আসে, আমি বলি, ‘মা দুধ নেবেন না, ওটাতে বিড়াল মুখ দিয়েছে’।
ভাবলাম বিড়াল দুধ খেয়েছে এখানে তো আমার কোনো দোষ নেই। আমি তো আর খাইনি। দশ বছরের এক বাচ্চা আমি, ভেতরে ছিল না কোনো খারাপ। ভাবলাম বেড়ালের মুখের দুধ ওরা খাবে কেন? নতুন মাকে বলার সাথে সাথে শুরু হলো একটা কালবৈশাখী ঝড়। হাতের কাছে যা পেল তাই দিয়ে আমাকে মারতে লাগল। মার খেতে খেতে নিস্তেজ শরীরটা মাটিতে নুয়ে পড়ল।
অনেকক্ষণ পর একটু স্বাভাবিক হই, মনে হলো আমার দোষটা কোথায়? হাজার বার নিজেকে এই প্রশ্ন করে কোনো উত্তর পেলাম না। তখনই সিদ্ধান্ত নিই আমি বেঁচে থাকব না। বেঁচে থাকার কোনো প্রয়োজন নেই। কিন্তু জানেন এখন ভাবি আমার বেঁচে থাকার দরকার ছিল। সমাজের কিছু পুরুষের জন্য আমার বেঁচে থাকার দরকার ছিল।

হাতের রুমাল দিয়ে চোখ মুছে দিয়ে বলি,
– না, তানিয়া তুমি কাঁদবে না। কাঁদলে তুমি না হয় আমি যেকোনো একজন আজ হেরে যাব। আমরা হারব না, হারতে আমরা আসিনি, আমরা এসেছি জিততে। আমরা এসেছি সমাজের বুকের কিছু কলঙ্কিত অধ্যায়ের পরিসমাপ্তি ঘটাতে। বল তানিয়া তুমি বলতে থাকো।

– নিস্তেজ শরীরটাকে উঠিয়ে নিয়ে হাঁটতে লাগলাম। ডান বাম কোনো দিকে না তাকিয়ে সোজা সামনের দিকে। অন্যদিকে তাকানোর খুব একটা প্রয়োজনও হয়নি, পেছন থেকে কেউ ডাকেনি আমায়। কেউ বলেনি-
‘কোথায় যাস, ফিরে আয়, সোনা মা ফিরে আয়, আর মারব না তোকে’।
হাঁটতে হাঁটতে বড় রাস্তার মাঝে যাই। দূর থেকে দেখছি একটা ট্রাক আসছে ওই ট্রাকটাকে লক্ষ্য করেই হেঁটে যাচ্ছি। তারপর কী হলো বলতে পারব না। চোখ খুলে দেখি আমি সরকারি একটা হাসপাতালে। হাতে পায়ে হালকা ব্যান্ডেজ করা। পাশে দাঁড়িয়ে আছে মধ্যবয়সী এক লোক। দেখতে আমার বাবার চেয়েও বড় দেখায়। চোখ খুলে বললাম কী হলো? লোকটি বলল-
– তুমি আমার ট্রাকের নিচে পড়েছ অল্পের জন্য বেঁচে গেলে। আরেকটু হলে অনেক বিপদ হতে পারত। এবার বলো কোথায় যাবে?
তখনি মনে পড়ে বাড়ির অত্যাচারের কথা। নতুন মায়ের আর জন্মদাতার অবহেলার কথা। সেই ভেবেই বলি,
– আমার বাড়ি কোথায় জানি না।
তারপর লোকটি ওই ট্রাকে করে আমায় নিয়ে যায় তার বাড়িতে। লোকটির নাম লিয়াকত। বাড়িতে তার বৌ বাচ্চারা আছে। আমাকে ওদের সাথে থাকতে বলে। মাঝেমধ্যে আমাকে বাড়ি পৌঁছে দেবে বলে নিয়ে যেতে চাইত। কিন্তু বাড়ির ঠিকানা আমি না বলাতে নিতে পারত না। এদিকে আমি ওদের পরিবারের একজন হয়ে যাই। ওই বাড়িতে আমি অনেক কাজ করতাম। একদিন লিয়াকত আমাকে বলে আমার ঠিকানা খুঁজে পেয়েছে। এই বলে আমায় সাথে নিয়ে যায়। পথে আমার গায়ে হাত দেয় এবং আমার সাথে অন্য রকম ব্যবহার করে। কাউকে বলতে নিষেধ করে। তারপর থেকে মাঝে মাঝে লোকটি আমার সাথে বিভিন্ন কাজ করত। সবগুলো কাজ যে একদম বুঝতে পারিনি তা নয়। এটা বুঝলাম লোকটা আমার থেকে অনেক কিছু চায়। কিন্তু তখন আমার বয়স মাত্র বারো/তেরো বছর। প্রায়ই ঘরে বলতাম আমার শরীর ব্যথা করে, আমার শরীর খারাপ লাগে তখন লোকটা আমায় ওষুধ এনে দিত। তবে ভয় দেখিয়ে বলত,
– বাসায় যেন কাউকে আমি না বলি।

পরে লোকটা আর আমায় বাইরে নিয়ে যেত না। এভাবে আমি চার/পাঁচ বছর এই বাড়িতেই থাকি। অনেক বার মরতে চাইছি পারিনি, আজরাইল যেন আমায় দেখতে পায় না। চার/পাঁচ বছর পর আমার শরীরের অনেক পরিবর্তন ঘটে। এরই মাঝে লোকটার বউ সেটা টের পায়। আমার ওপর অনেক অত্যাচার শুরু করে। আমাকে তাড়িয়ে দিতে বলে।

ড্রাইভার আমাকে নিয়ে শহরের এক বাসায় কাজের জন্য রেখে আসে। ভালো একটা পরিবেশ পেয়েছি বলে নিজের কাছেও ভালো লাগতে থাকে। কিন্তু দিন যেতে যেতে বুঝলাম নারীকে আসলেই সব পুরুষ নারীই ভাবে মানুষ ভাবে না কখনো। এতো ভালো পরিবেশেও আমি নিজেকে নিজের করে রাখতে পারলাম না। সেই ঘরের গৃহকর্তার দৃষ্টি পড়ে আমার শরীরের ওপর। আস্তে আস্তে দখল করে নেয় আমার যৌবনের দেহটাকে। এই বাড়ী থেকে পালিয়ে যেতে চেয়েছি, কিন্তু কোথায় যাবো?

সেদিন ঘরে আমি একা বাড়ির সবাই বাইরে। স্বাভাবিকভাবে ঘরে আসে কর্তার বড় ছেলে, বয়স ২৩-২৪ বছর হবে। একা ঘরে আমাকে পেয়ে হাতে হাত রাখে। তরতাজা যুবক যৌবন তো তার ভরা। সেও আমায় ভোগের সামগ্রী বানায়। শুরু হলো একই বাসায় বাবা আর ছেলের সাথে আমার শারীরিক সম্পর্ক। আমার বয়স আঠারো ঊনিশ তখন। বাসার সব কাজ সামলাই তার সাথে নিজের যৌবনের আর বাবা-ছেলের উত্তেজনাকে স্রোতের ডিঙি নৌকায় ভাসাই। ওই বাসায় আমার কাজের কোনো দোষ পড়ে না। কেউ কোনো দোষ বের করলেও বাবা-ছেলের সমর্থনে ভালোই চলছে আমার দিন।

হঠাৎ একদিন বুঝতে পারি আমার পেটে বাচ্চা এসেছে। বাবা ছেলে দুজনকেই আলাদাভাবে বলি এবং দু’জনেই বলে বাচ্চা নষ্ট করে দিতে। এবার ছেলেকে বাদ দিয়ে টাকার মালিক গৃহকর্তাকে বলি,
‘আপনি সব ব্যবস্থা করেন না হয় আমি আপনার ছেলের নামে বদনাম দেব’।
লোকটা আমায় এক ডাক্তারের কাছে নিয়ে যায়। টাকার বিনিময়ে ডাক্তার সব কাজ করে। ওই মুহূর্তে আমার মায়ের ছবি ভেসে আসে চোখে। তখনই চিৎকার দিয়ে ডাক্তারকে বলি,
‘ডাক্তার সাহেব আমার মা হওয়ার ক্ষমতা বন্ধ করে দিন, নষ্ট করে দিন। আমি এক পতিতার মা হতে চাই না।’

এই ঘটনার কিছুদিনের মাথায় ওই বাসায় আমাকে নিয়ে হৈচৈ পড়ে যায়। আমাকে তাড়িয়ে দেয়ার কথা বলছে। আমি কোথায় যাব, তবুও ঘর থেকে বের হয়ে অজানার পথে হাঁটতে থাকি। অলিতে গলিতে ঘুরতে ঘুরতে বিধি যেন আমার পেছন ছাড়তে চায় না। পথেই দেখা এক মহিলার সাথে। তিনি তার বাড়িতে নিয়ে যায় আমাকে। সেখানে গিয়ে দেখি সেই বাড়িতে তেমন কোনো লোক নেই। আছে কয়েকজন মহিলা। বাড়ির পরিবেশটাও একটু আলাদা। একদিন পার হতেই বুঝতে পারি এটা একটা পতিতালয়। সকাল-বিকাল সন্ধ্যায় বাইর থেকে নানা বয়সী পুরুষ মানুষ এখানে আসে। যাকে যার পছন্দ হয় তাকে নিয়েই চলে যায় অন্দরমহলে।

আস্তে আস্তে আমিও ওদের একজন হয়ে যাই। শরীরের বিনিময়ে ভালো খাবার ভালো কাপড় সুগন্ধি সাবান শ্যাম্পু ছুটতে থাকে আমার দিকে। গায়ের সুগন্ধি আর যৌবনের সুধা পান করতে ছুটে আসে অনেক তরতাজা যুবক। এখানে কিছুদিন থাকার পর এখানকার লিডার আমাকে সরকার অনুমোদিত এক পতিতালয় পাঠায়। এখানে আমি তিন/চার বছর থাকি। দুই বছরের মাথায় এক লোকের নজরে পড়ি, উনি সেখানে প্রায়ই আসত। এসে আমায় ডাকত। বুঝতে পারি অন্যদের চেয়ে সে আমার কাছে আসতে বেশি পছন্দ করে। ওই লোকটার সাথে আমি দেড় বছর এখানে এভাবেই থাকি। উনি প্রতিদিন আসতো না। এই লোকের জন্য অন্য কেউ আমার কাছে আসতে পারত না। যখন আমার বয়স সাতাইশ বছর সেই সময়ে এই লোক আমাকে বিয়ের প্রস্তাব দেয়। সবদিক চিন্তা করে তাকে বলি,
‘আমি কখনো মা হতে পারব না’।
তারপরও সে আমাকে বিয়ে করে নিয়ে আসে। সন্তান না হওয়ার কথা শুনে বলল,
‘আমার সন্তানের প্রয়োজন নেই’।
এরপর থেকে এখন পর্যন্ত ১৫ বছর আমি এই ঘরে আমার স্বামীর ঘরে আছি।

তানিয়া আরো বলতে লাগল,
– জানেন অনেকে অনেক কথা বলেছে আমাকে। আমি কোনো কথার উত্তর দিইনি। আমি জানি বোবার কোনো শত্রু হয় না। এখন আমি বোবার মতো থাকি। আমার খবর জানাজানির পর এক মহিলা নেত্রী এসেছে আমার সাথে কথা বলতে। নেত্রী বলেন- ‘আচ্ছা কেন আপনার স্বামী আপনাকে বিয়ে করল। অন্য জায়গায় করলে ভালো হতো না’?
উত্তরে আমি বলেছি,
‘আমার মাঝে অনেক রূপ বা কৌশল আছে সেই রূপে মাতাল হয়েছে আমার স্বামী। স্বামী সন্তান চায়নি, চেয়েছে নারী। আমিই তো তার জন্য, ঠিক তাই না’?

এখন আমি বেঁচে আছি। এখন বুঝি বিধি কেন আমায় বাঁচিয়ে রাখলেন। আমাকে নিশ্চয়ই কারো প্রয়োজন ছিল। আর সেই কারণেই অনেক ঘাট পেরিয়ে এখন বেঁচে আছি, ভালো আছি।

শেষ হয়ে গেল তানিয়ার,এক পতিতা বধূর কথা। সব কথা বলে হা করে তাকিয়ে থাকে খোলা আকাশের দিকে। একবার নাম ধরে ডাকতে সাড়া দেয় না। ২য় ও ৩য়বার ডাক দেয়ার পর সাড়া দিয়ে বলে-
– আচ্ছা কেন আমি এখানে এলাম? কেন আমি এমন হলাম? আমি নারী বলে নাকি এই সমাজে নারীর পাশাপাশি পুরুষ আছে বলে। আমি একজন পতিতা হয়েছি। সমাজে আমার একটাই পরিচয় আমি পতিতা। নারী বলে আমার মাতৃত্বটাকে নষ্ট করতে হয়েছে। কই কোনো পুরুষ তো দেখি না অন্যায়ভাবে সন্তানের জন্ম দিয়ে নিজের পিতৃত্বটাকে নষ্ট করেছে। সৃষ্টির কি অপরূপ খেলা, আমরা মা হব তার প্রমাণ নিয়ে ঘুরতে হবে দশ মাস আর কোনো বাবার কোনো কিছুর প্রয়োজন হয় না। সমাজে আমার যেমন প্রয়োজন ছিল একজন পুরুষের, তেমনি পুরুষের প্রয়োজন ছিল আমাকে। আমিই পরিচয় পেলাম পতিতার। কিন্তু তারা তো ভদ্রবেশের লোক। ওদের তো কোনো নাম হয় না।

তানিয়ার প্রশ্নের জবাব দিতে চেয়েও খুঁজে পাইনি। বিদায় বেলায় বলেছি-
– আমরা গেলাম। যদি কখনো তোমার সাথে আবার আমাদের দেখা হয় সেদিনও আমরা তোমাকে স্যালুট করব। সমাজের বুকে মাথা উঁচু করে বাস করছি আমরা। তবে কার মাথা কোথায় কতটুকু বিক্রি করে দাঁড়িয়ে আছি জানি না। একটা সন্তানের দায়ভার তার বাবা-মায়ের, একজন নারীর দায়ভার কে বহন করবে? সমাজ যদি বদলে যেতে পারে তাহলে নারীই পারবে তার দায়ভার বহন করতে।

শুধু তানিয়া না আমাদের সমাজের অনেক তানিয়াই আছে যারা সামান্য সামাজিক বা পারিবারিক সমস্যার মোকাবিলা করতে না পেরে হারিয়ে যায় অজানা পরিচয়ে। আমরা তো মানুষ সৃষ্টির সেরা জীব। মানুষ হয়ে কেন মানুষের জন্য এমন পরিবেশ করব যে সে সঠিক স্থান থেকে সরে যেতে হবে। একটা নারী না পুরুষ সেভাবে না নিজেকে ভাবতে হবে মানুষ হিসেবে। দিতে হবে মনুষত্বের প্রমাণ। একটা ঘর সংসার সব জায়গায় প্রয়োজন নারী-পুরুষের তবে তাকে তার প্রাপ্য সম্মান কি আমরা দিই? সমাজ তুমি নারীকে নারীরূপে না মানুষ রূপে, মায়ের রূপে, মাটির রূপে দেখতে শেখ। নারী যেমন পাবে তার সম্মান আর সমাজ পাবে আত্মমর্যাদা।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here