দোতলার মেয়েটি

0
1039

আব্বু-আম্মু যাবে কক্সবাজার ঘুরতে। তাদের প্রয়োজনীয় জিনিসগুলো গুছিয়ে দিচ্ছি। প্রতিবছর এই সময়টা আমাদের এই সুন্দর দেশটা ঘুরে দেখেন। প্রকৃতির অপূর্ব সুন্দরের লীলাভূমি আমাদের এই দেশ। আমিও সঙ্গী হই, কিন্তু এবার আমার যাওয়া হবে না, কয়েকদিন পর সেমিস্টার ফাইনাল। ঘুরতে যেতে আমার খুব ভালো লাগে, তাই একটু মন খারাপ লাগছিলো। মনে হচ্ছিলো, এই পড়াশুনার জন্য আর কত স্যাক্রিফাইস করতে হবে কে জানে? কিন্তু লেখাপড়া তো বন্ধও করা যাবে না ভবিষ্যতের কথা ভেবে।

ঢাকার এই ফ্ল্যাটটা বাবা কিনেছিলেন। যিনি বাড়িটা তৈরি করেছিলেন, তিনি অবসরপ্রাপ্ত সরকারি অফিসার। তিনি নিজে থাকবেন বলে, বাড়ির সামনে প্রচুর জায়গা রেখেছেন। মাঝে উঠোন। চারদিক দিয়ে উঁচু প্রাচীর দেয়া। সহজে কেউ বাড়ির ভেতরে ঢুকে যেতে পারবে না। নানান রকমের গাছপালার সমাহার দেখেই বোঝা যাচ্ছে তিনি রুচিশীল মানুষ। তিন তলা বিল্ডিং তৈরি করে পরে টাকার অভাবে বিক্রি করে দেন কিছু পজিশন। শুনেছি তিনি যে চাকরি করতেন। তিনি চাইলে ঢাকার শহরে আলিশান বাড়ি বানাতে পারতেন।

কিন্তু তিনি ঘুষ খেতেন না, কী আশ্চর্য! মানুষ ঘুষও খায় না! আব্বু-আম্মু যেদিন প্রথম আসে বাড়ি কিনতে বাড়ির সামনে বিরাট অংশ দেখেই পছন্দ করে ফেলেন। বাড়ির ভিতরে ঢুকে তো অবাক! ঢাকা মহানগরীর মাঝে সবুজে ঘেরা এমন বাড়ি আছে ভাবনার বাহিরে। সেই থেকে এই বাড়িতেই আমাদের বসবাস। ভদ্রলোক নিজে থাকার জন্য দোতলা আর বাকি ফ্লোরগুলো বিক্রি করে দেন। দুইটি মাত্র ছেলেমেয়ে। ছেলের বিয়ে দিয়েছেন। বউ নিয়ে ছেলে বিদেশে থাকেন। এখন ছুটিতে এসেছে বাবা-মা কে দেখে যাবার জন্য। মেয়ের জন্য পছন্দসই পাত্র খুঁজে হয়রান। আর আমরা থাকি তিনতলা। এ ছাড়াও আর একটা ফ্যামিলি থাকে চারতলাতে। আব্বু আম্মুর যাবার সময় এসে গেলো। আমি ওনাদের বিমানবন্দরে দিয়ে এলাম। বাড়িওয়ালার ফ্যামিলির সাথে আমাদের খুব ভালো সম্পর্ক। ওনার ওয়াইফ আমাকে তার নিজের ভাইয়ের মতো ভালোবাসেন। উনার কোনো ভাই বোন নেই। ওনার ওয়াইফ আর ছোট বোন। আমার এই ক’দিনের খাওয়া দাওয়ার ব্যবস্থা করে, বাড়িওয়ালার বাসাতেই।

আমি ফিরে এসে খেতে বসবো। এমন সময় কলিং বেল বেজে উঠলো। দরজার কাছে গিয়ে দরজা খুলে দেখি বাড়িওয়ালার বোন দাঁড়িয়ে। হাতে একটা প্লেট ঢাকা। বলল ‘ভাবি তোর জন্য পাঠিয়ে দিয়েছে, খেয়ে নিস’। মুনা আপু আমাকে তুই বলে ডাকে। আমি নিজেই তাঁকে বলেছি তুই করে ডাকতে। কারণ বয়সে আমি ছোট। ঢাকনা সরিয়ে দেখি ভাত, সবজি, ডাল আর মুরগির ঝাল ফ্রাই। বাড়িওয়ালার বোনের নাম মুনা। মুনার বয়স ৩০ এর বেশি। সি.এ পাশ করে এখন একটা বহুজাতিক কোম্পানিতে রিজিওনাল একাউন্ট ম্যানেজার হিসাবে কাজ করছে। দেখতে দারুণ। উচ্চতা প্রায় সাড়ে ৫ ফিট। ফর্সা কিন্তু হাল্কা মোটা হয়েছে তাই একটু তুলতুলেও লাগে। রেগুলার পার্লারে যায় তাই চেহারায় একটা অন্যরকম টোন আছে।

এলাকায় ছেলেরা শুধু না অনেক বিবাহিত লোকও ওর জন্য পাগল। আমি প্রথমে মুনাকে আপু বলে ডাকতাম। কিন্তু, সে আমাকে আপু বলে ডাকতে নিষেধ করেছে। আমি মুনাকে থ্যাংকস জানিয়ে দরজা বন্ধ করবো ভাবছি, তখন দেখি মুনার হাসি হাসি মুখে আমার দিকে তাকিয়ে একটু ঘরের দিকে উকি মারার চেষ্টা করছে। আমি ব্যাপারটা বোঝার জন্য ওর মুখের দিকে কৌতুহল ভরে তাকালাম।

মুনা পরের দিন সকালে আমায় ডেকে বললো, সে তার বান্ধবীর সাথে সন্ধ্যায় মুভি দেখতে যাবে। যমুনা ফিউচার পার্কে। আমি যেন বিকালে ইস্টার্ণ প্লাজা মার্কেট থেকে তার মোবাইলটা সাড়িয়ে আনি। দু’দিন আগে বান্ধবীর বিয়েতে গিয়ে নাচানাচি করে মোবাইলের স্ক্রিনটা ভেঙে যায়। মুনা বাসা থেকে বের হবার সময়, আমাকে বলে গেলো মোবাইলটা ওয়ারড্রোবে রেখেছে, আমি যাবার সময় যেনো নিয়ে যাই। কিছুক্ষণ পর তার রুমে গিয়ে আমি তো অবাক হয়ে গেলাম! আমার মনে হলো, মুনা গায়ে গতরে বড় হয়েছে ঠিকই কিন্তু বুদ্ধিশুদ্ধি এখনো হয়নি। কোনোকিচ্ছু সামলে রাখতে জানে না। নিজের কাপড়চোপড়, জুতো, অফিসের ব্যাগ, পারফিউম সব ঘরের ভেতর ছড়িয়ে ছিটিয়ে একদম একাকার। রুমের যেখানে সেখানে ব্রা-প্যান্টি ফেলে রেখেছে। খাটের উপরে ফেলে রেখেছে ডি প্লাস ব্রা-প্যান্টি। ওয়ারড্রোব খুলে দেখি ডি প্লাস ব্রার উপরে মোবাইল। মুনার সাপের মতো শরীরে এত বড় বড় স্তন গুলো বড্ড বেসামাল থাকে সবসময়। একটু নড়াচড়া করলেই ভয়ংকরভাবে দোলা খেতে শুরু করে। লম্বাও মেয়েটা কম নয়। প্রায় পাঁচ ফুট পাঁচ ইঞ্চি। পাতলা কোমর, উঁচু পাছা দেখলে যে কোনো ছেলে কাত হয়ে যাবে। বুঝতে পারছি যে আমাকে দেখাতেই রুমে সবকিছু ইচ্ছা করে এলোমেলো করে রেখেছে। রুমে সময় নষ্ট না করে, আমি দ্রুত চলে গেলাম মোবাইলটা নিয়ে ইস্টার্ণ প্লাজায়। সার্ভিস করে দিয়ে দোকানের ছেলেটা ফোনটা চার্জ দিতে বলেছিলো। তাই, রুমে এসে চার্জারে কানেকশন দিলাম। সাথে সাথে মোবাইলটা অন হয়ে গেলে। আই ফোন সেভেনে এই এক জ্বালা, চার্জার লাগালেই সেট অন। মোবাইলটা অন হয়ে গেলো সাথে সাথে। যথারীতি লক করা। কেন যেন হঠাৎ করে মুনার ফোনটা ঘাটতে ইচ্ছে হলো আমার। আগ্রহটা তৈরি হয়েছে মুনার কারণেই। কার সাথে কথা বলে, কার সাথে চলাফেরা করে বা কার সাথে সেলফি তোলে এগুলো চেক করে দেখার আমার কোনো আগ্রহ নেই। আমার আগ্রহ মুনার মোবাইলের ফটো গ্যালারি। কিন্তু পাসওয়ার্ড কোথায় পাই! আমি জানি মুনার পাসওয়ার্ডটা পাঁচ সংখ্যার। কিন্তু পাসওয়ার্ডটা কী? ভাবতে ভাবতে একটা আন্দাজে মনে পড়লো আমার বা মুনার নাম্বার এর প্রথম সংখ্যাগুলো দিয়ে দেখি। সেটা দিতেই মোবাইলের লক খুলে গেল। মোবাইলের সব কিছুই ঠিক ঠাক। কিন্তু সেলফিগুলোর দিকে চোখ পড়তেই মাথাটা আমার গরম হয়ে গেল। মুনার সেলফি তুলেছে অন্তত কয়েকশ। প্রতিটাতেই খুব যত্ন করে মেকআপ করা। কিন্তু তাদের সব কয়টাতেই তার শরীরে বাঁকগুলো বাড়াবাড়ি রকমের চোখে পড়ছে। গায়ের জামা কাপড় ও অসংলগ্ন। একটা সেলফিতে তো প্রায় দুটো বুকই ডিপ নেক নাইট টি-শার্টের ফাঁক দিয়ে বের হয়ে এসেছে। সেটাতে আবার ঠোঁট পাউট করে মুনা সেলফি তুলেছে, যেন কোনো প্রেমিককে দিচ্ছে। চিকন স্লিভের টিশার্ট পড়া একটা পিকে নিজের কোমড়ের ওপর টি-শার্ট তুলে নিজের নাভী আর টাইটস পড়ার ছবি তুলেছে মুনা। একটা না ,এমন ছবি পেলাম অন্তত দশটা। একেকটা একেক কালারের টাইটস পড়া। আমার মনে হলো মুনা আপু যেন আগুনের গোলা। এমন আগুন ঘরে রাখলে, ঘর পুড়তে বাধ্য।

– বেশ ভালোইতো আছিস!
– কেন?
– খুব এনজয় করবি এই কদিন, তাই না?
– কেন, এতে এনজয় করার কি আছে?
– কেন আবার, এ কয়দিন একা থাকবি, ড্রিংক করবি, বান্ধবীদের নিয়ে আড্ডা মারবি, রাতে মজা করবি সেটা এনজয়মেনট না?
– ও, তাই বলো!
– তাছাড়া কাল শুক্রবার তাই আজতো পার্টি নাইট তাই না?
– না না তেমন কিছু না!
– এই এখন খেয়ে দেয়ে একটু টিভি দেখে তারপর ঘুম দেব। তারপর কাল উঠে নাস্তা করে একটু আড্ডা মারব। বিকেলের কোন প্ল্যান নেই।
কথাগুলো শুনে কিছুক্ষণ কী যেন ভাবলো মুনা, তারপর বললো।
– বাহ, তবে তো তুই ভালো ছেলে।
– ভালো কী না জানি না। তবে তুমি যা বলছো সেগুলো আমার পছন্দ না।
– তাহলে তো তুই সত্যি ভালো ছেলে। জানিস, আমরা যখন এই রকম সুযোগ পেতাম তখন সব মেয়েরা একসাথে হয়ে যা যা করতাম তা তুই আন্দাজও করতে পারবি না।
– তুই ভালো ছেলে, যা খেয়ে দেয়ে শুয়ে পড়। কাল দেখা হবে।
এই বলে মুনা নিচে চলে গেলো। আমি খেতে খেতে আমাদের কথাবার্তাগুলো ভাবতে লাগলাম। মুনার কথাগুলো ‘যা যা করতাম তা তোরা আন্দাজও করতে পারবি না’।

যাই হোক, খাওয়া শেষ করে লাইট অফ করে শুয়ে টিভি দেখছি। একবার ভাবলাম মুনার মোবাইলে কল দিই, তারপর আবার ভাবলাম কী জানি কী ভাববে, তাই আর কল দিলাম না। একটু পর একটা এসএমএস করলাম ‘গুড নাইট’ বলে। মুনাকে, তারপর শুয়ে পড়লাম। কিন্তু ঘুম আসছিল না। এইভাবে প্রায় ৩০ মিনিট কেটে গেছে, হঠাৎ মোবাইলটা বেজে উঠলো। দেখি মুনা ফোন করেছে। রিসিভ করতেই মুনা বলল,
– কিরে, কী করিস?
– না তেমন কিছু না!
– ঘুম আসছে না নাকি?
ফোনের ওপাশ থেকে মুনার গলাটা কেমন যেন অন্য রকম লাগলো। আমিও বললাম,
– না, ঘুম আসছে না।
তারপর একটু ফাজলামো করে বললাম।
– তাইতো, তোমার কথা চিন্তা করছি।
ওপার থেকে কোন জবাব এলো না। তাতে আমি একটু ভয় পেয়ে জিজ্ঞেস করলাম,
– রেগে গেলে নাকি, মজা করলাম বলে?
– না রে রাগ করিনি। বাট…
– বাট কী?
– আসলে আমারও ঘুম আসছিলো না! তাই ভাবলাম তোর সাথে একটু গল্প করি।
– এটা তো বেশ ভালো।
– তাই না?
– হ্যাঁ।
দু’তলা আর তিনতলা ফোনে গল্প করছে।
– একটা কাজ করি চলো, তুমি নিচের বারান্দাতে দাঁড়াও, আর আমি উপরের বারান্দাটায় দাঁড়াই। তারপর গল্প করি, শুধু শুধু মোবাইল কোম্পানিকে টাকা দিয়ে কী হবে?
মুনা হাসল, কিন্তু কোনো রেসপন্স করলো না।
তারপর মুনা হঠাৎ করে বলল
– এই শুভ্র, ছাদে যাবি?
– এখন?
– হ্যাঁ, এখন।
– তোমার ভাইয়া, ভাবী যদি কিছু বলে?
– ওরা টের পাবে না।
– কেন?
– ঘুমিয়ে পড়েছে, তুই ছাদে চলে যা আমি একটু পরে আসছি।
এই বলে ফোনটা কেটে দিলো সে। আমি ভেবে কূল কিনারা পাচ্ছি না কী করবো! অবশেষে ছাদে চলে গেলাম। প্রকৃতির নিয়ম মেনে সবকিছু হয় এইভাবে। লজ্জায় আমার সারা শরীর কাঁপতে থাকে। ঘামতে শুরু হয়। সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে পারলাম না। দ্রুত নিচে নেমে আসলাম। রুমে গিয়ে পানি পানের জন্য গ্লাস নিলাম। তিন চার গ্লাস পানি গিললাম। মনের ভেতরে একটা খটকা লেগেই থাকে। মুনা আপুর মুখ কেন লাল হয়ে উঠছে, তার সারা শরীর ঘামে বৃষ্টিতে ভেজার মতো হয়ে ওঠেছে। তবুও মুখে হাসি যেমন রাজ্য জয় করার মতোই। এক চরম সত্যের মুখোমুখি পড়ে গেলাম। আমার পূর্বের বিশ্বাস ধ্বসে পড়তে থাকে! বিজ্ঞানের ভাষায়, সম্পর্ক যদি মানসিকের চেয়ে শারীরিক হয়। তবেই নাকি ভালোবাসা বেশি হয়। কে না নীরবে বসে বসে কামচিন্তা করতে পছন্দ করে না? আমার মনে হয় যারা অস্বীকার করে তারা মিথ্যে বলে। রুমে এসে বেশ কিছুক্ষণ চুপচাপ শুয়ে শুয়ে ভাবতে থাকলাম কিছুক্ষন আগের অনুভূতিগুলো। নারীর লজ্জা হচ্ছে লজ্জাবতী গাছের মতো। হাত লাগলেই শেষ। সেটা স্বামীর হাত হোক বা অন্য কোনো পুরুষের। এই হাত লাগা মানে শুধু শারীরিক স্পর্শ না, পুরুষের সঙ্গতায়ও নারীর লজ্জা কেটে যায়। যেমন রাতে ছাদে চক্ষু লজ্জা উঠে গেছে মুনার। নীলাভ এবং ফেনিল জলরাশি; ক্ষণে ক্ষণে তা আছড়ে পড়ছে মুনার দেহ নদীতে। তীরজুড়ে যেন নয়নাভিরাম সুবজের হাতছানি। লজ্জা-শরমের মাথা খেয়ে মেয়েটা এক সময় নির্লজ্জ হয়ে গেলো। ভুলেই গেলো আমি তার জুনিয়র। কিছুটা দ্বিধা, কিছুটা সংকোচ নিয়ে প্রেম বা কামনা মুনার লজ্জাশীলতাকে গ্রাস করে, কামনার জোয়ার জলে ভেসে যায় লজ্জা। যৌবনের চাহিদার কাছে হয়তো অনেক সময়ে হার মেনে যায় সামাজিক নিয়মনীতি, ভয়। মুনারইবা কী দোষ! বয়স তো হয়েছে। তাই কখনো কখনো হয়তো জৈবিক চাহিদার কাছে কাণ্ডজ্ঞানহীন হয়ে পড়ে মানুষ। ফলে নির্দিষ্ট একজন পুরুষের প্রতি আকর্ষণটা গভীর থেকে আরো গভীরে চলে যায়।

কনজারভেটিভ ফ্যামিলির মেয়েকে ওড়না ছাড়া দাঁড়াতে বললে সে লজ্জায় মরে যাবে। অথচ মুনার! মানুষের মধ্যে কারা তবে ভেদাভেদ সৃষ্টি করতে চায়? মানুষের মধ্যে খুব করে দরকার ভালোবাসা, মমত্ববোধ ও মানবিকতা। আজকে কেন জানি মনে হচ্ছে, ভালোবাসা ছাড়া এই গ্রহ বাঁচবে না, টিকবে মানুষ! ওয়াস রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে বিছানায় শুয়ে ভাবতে ভাবতে কখন ঘুমিয়ে পড়লাম জানি না, ঘুম ভাঙলো কলিং বেলের শব্দে। দরজা খুলে দেখি মুনা দাঁড়িয়ে আছে চায়ের কাপ হাতে। কোনো কিছু না বলেই হঠাৎ কপালে একটা চুমুর সাথে গুডমর্নিং উইশ করে আমাকে দুপুরে ওদের ওখানে খেতে যেতে বললো। মুনার চলে যাওয়া দেখে মনে হচ্ছে যেনো কাশফুল দুলছে সারা অঙ্গে!

দোতলায় উঠে ডোরবেল চাপতেই ষাটোর্ধ আরজুমান বেগম বেরিয়ে এলেন, তিনি মুনার মা। গোল চশমার ফাঁক দিয়ে চকচকে চোখ দুটো আগ্রহ নিয়ে আমার আপাদমস্তক একবার পর্যবেক্ষণ করে নিল। তারপর ভ্রু নাচিয়ে বললেন। বাবা তোমার জন্যই অপেক্ষা করছিলাম। চলো খেতে বসবে। তোমার জন্য মুনা অপেক্ষা করছে। ঘরে ঢুকে দেখি মুনা খাবার টেবিলে বসে আছে। জানালা দিয়ে একটা সরু আলোকরশ্মি সোজা মুনার মুখে এসে পড়ছে। মুখ দেখে মনে হচ্ছে হরেক রকম মণি-মুক্তো, চুণী-পান্না, নীলচে সবুজ পাথরে খচিত। আমার ভাবনায় চেদ পরলো, ভাবী মানে আমি যাকে বোন বলে ডাকি। ‘কী হলো খাবার খাবে না’? ভাবীর কথায় আমি কিছুটা লজ্জা পেলাম। খাবার খেতে শুরু করতে গিয়ে আমি হতবাক। খাবারের টেবিলে মেনু দেখে আমি স্তব্ধ! তরকারি সবই আমার পছন্দের। বুঝতে পারছি খাবার সব মুনা নিজেই রান্না করেছে। না হয় খালাম্মাকে বলেছে আমার পছন্দের কথা। খাবারের মেনুতে শাকসবজি। ছোট মাছ ও ভর্তা। তৃপ্তি সহকারে খাবার খাচ্ছি দেখে মুনা মৃদুস্বরে হাসলো।

হাসলো ভাবীও ভাবী মনে হয় কিছু একটা বু্ঝতে পেরেছে। আমি বারবার হেঁচকি খাচ্ছি দেখে মুচকি হেসে জিগ্যেস করলো
– শুভ্র তরকারি কি ঝাল হয়েছে?
– না না ঝাল হয়নি।
এই হাসিতেই বুঝতে পারছি আজকের রান্না সব মুনাই করেছে। খাবারের টেবিল থেকে উঠে যেতে ইচ্ছা হচ্ছে না মুনা মুনাকে রেখে, কিন্তু খাবার শেষ, আরজুমান আন্টির ভয়ে বসে থাকতেও পারছি না। ভাবতে ভাবতে বেসিনে হাত মুখ ধুতে গেলাম। আয়নায় নিজের চেহারাটা দেখেই চমকে উঠলাম। চোখ দুটো ভয়ঙ্কর রকমের লাল, ঠোঁট দুটো ফোলা! সারা মুখে পানির ঝাপটা দিয়ে বারান্দায় এসে দাঁড়ালাম। বুঝতে পারছি গতরাতে মুনা নামের ঝড়ের আঘাতে চোখ লাল হয়ে আছে। আর ঠোঁট জোড়া ফোলে আছে মুনা’র চুমুর তাণ্ডবে। হয়তো এ কারণে ভাবীর মুচকি হাসি। পরিস্থিতি ভিন্ন হতে পারে। মানে, আমি লজ্জায় দ্রুত নিজের রুমে চলে এলাম। খাবার খেয়ে শরীর কিছুটা অলস হয়ে গেছে। আর হবেই না কেন এতো বেশি খাবার খেয়েছি। আমার এই বা কী দোষ, মুনা আমার পছন্দের সব খাবার রান্না করেছে। অল্প অল্প করে খেয়েও পেট এখন মন্দিরের ঢোল। বারান্দায় পায়চারি করছি আর ভাবছি মুনা কেন আমার পছন্দের সব খাবার রান্না করে খাওয়ালো!

আর গতরাতে যা হলো তা কি কেবলি যৌবনের তাড়না নাকি প্রেম। তবে কী মুনা আমার প্রেমে পড়েছে? ধ্যাৎ এসব কী ভাবছি আমি। আর কী করে সম্ভব! বয়স এবং পড়াশোনায় মুনা আমার কত সিনিয়র। যদি তাকে তুই বলে ডাকি তার অনুমিত তো মুনাই দিলো। কিন্তু সেতো পড়াশোনা শেষ করে কত ভালো জব করেছেন। আমি এখনো কলেজে পড়াশোনা করছি। তাহলে গতরাতে যা হলো তা কী মুনা নিজেকে পরিতৃপ্ত করতে করেছে! নাকি সত্যি সত্যি মুনা আমার প্রেমে পড়েছে? ধ্যাৎ আর ভাবতে পারছি না। বারান্দা থেকে রুমে চলে এলাম।

মোবাইল ফোনের রিংটোনের আওয়াজে ঘুম ভেঙে গেল। মোবাইল হাতে নিয়ে দেখি মুনার কল! এদিকে প্রায় সন্ধ্যা ছুঁই ছুঁই ভাব। ফোন রিসিভ করতেই ঝাঁঝালো কণ্ঠে ওপাশ থেকে বলা শুরু ‘কিরে আর কতক্ষণ ঘুমাবি? সেই কখন থেকে তোর মোবাইলে কল দিয়েই যাচ্ছি। কল রিসিভ হয় না। দরজায় ঠকঠক করে চলে এলাম! কলিং বেল বাজালাম কিছুতেই তোর ঘুম ভাগলো না!’
– সরি মুনা।
– হয়েছে হয়েছে আর সরি বলতে হবে না। তারাতাড়ি রেডি হয়ে নে বাহিরে যাবো।
এইটুকু বলেই কল কেটে দিলো মুনা! আমি কিছু বলা বা জিজ্ঞেস করার সুযোগ পেলাম না। কয়েক মিনিট অপেক্ষা না করেই দরজায় ঠকঠক না করেই সোজা রুমে ডুকে পড়লো মুনা। অবশ্য দোষটা আমার। ঘুম থেকে উঠে মোবাইলে কথা বলতে বলতে দরজা খোলা রেখে ছিলাম। রুমে ডুকেই মুনা, দুই হাতের দশ আঙুলে দিয়ে চোখ ডেকে নিলো! এমন একটা পরিস্থিতি হবে আমিও কল্পনা করতে পারিনি। একটু হেসে প্রসঙ্গ চেঞ্জ করতে, আমি ওর মাথা থেকে পা অব্দি একবার দেখে নিয়ে বললাম। খোলা চুলে মোহময়ী সুন্দরী লাগছে তোমাকে। আমি অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছি দেখে মুনা বললো।
– কী হলো?
আমি বলেই ফেললাম ‘খুব সুন্দর লাগছে তোমাকে’।
ওর মুখটা লজ্জায় রাঙা হয়ে উঠলো। মৃদু অভিমানের সুরে বললো- হয়েছে হয়েছে। চল বের হই।
বাসা থেকে বের হয়ে বললাম। দাঁড়াও ক্যাব বুক করি ।
কিন্তু ট্যাক্সিক্যাব পাওয়া গেলো না। ট্যাক্সি পেলাম না দেখে। মুনা হেসে উঠলো, বললো সমস্যা নেই।
বললাম, রিক্সায় যেতে হবে মনে হচ্ছে, তোমার অসুবিধে নেই তো? আমরা কিন্তু আরো একটু চেষ্টা করে ট্যাক্সি নিতে পারি।
না না। ফেরার সময় বরং ট্যাক্সিতে ফিরবো।
মনে মনে ভাবলাম আমিও তো তাই চাই।

ঠিক করলাম রিক্সা করে মার্কেট পর্যন্ত যাবো। রিক্সায় উঠে বুঝলাম, ট্যাক্সিক্যাব না পেয়ে ভালোই হয়েছে। ঘষাঘষি করে দু’জনে রিক্সায় বসলাম। আমি আরাম করে বসার জন্য হাতটা মুনার কোমরের পেছনে রাখলাম। আমরা একথা-সেকথা বলতে বলতে চললাম। একটা জোরে ব্রেক মারার ফলে আমার হাতটা সরাসরি মুনার কোমরে এসে পড়লো। আমি হাতটা একটু সরালাম বটে কিন্তু পুরোটা নয়। হাতটা কোমরে ওপর ছুঁয়েই রইলো। সে কথা বলতে গিয়ে হটাৎ চুপ করে গেলো। দেখলাম ওর মুখ লাল হয়ে উঠেছে। তবে রাগে নয়, লজ্জায়। আমি আঙ্গুল একটা থেকে দুটো থেকে তিনটে এরকম করে পুরো হাতটাই ওর কোমরের মাঝে বোলাতে লাগলাম। মুনা কথা বন্ধ করে। একবার আমার দিকে তাকিয়ে বাইরের দিকে তাকিয়ে রইলো। আমার মনে হলো, একটা সম্মতি নেওয়াটা প্রয়োজন। তাই জিজ্ঞেস করলাম, ‘তোমার বসতে অসুবিধা হচ্ছে নাতো’।
– না না। ঠিক আছে।
ব্যাস আর ভেবে লাভ নেই। আমি হাতটা পিঠে বোলাতে বোলাতে আস্তে আস্তে কাঁধে রাখলাম। মুনা, কিন্তু কোনো ভ্রুক্ষেপ করলো না। আমরা যেমন কথা বলতে বলতে যাচ্ছিলাম তেমনি চলতে লাগলো।
মুনার নিশ্বাস ঘন হয়ে উঠেছে। কেঁপে উঠে মাথা নিচু করে নিলো। এরকম চলতে চলতেই আমরা মার্কেটে চলে এলাম। মুনা বেশি কথা বলছিলো না। ওকে একটু হালকা করতেই আমি কথা বলতে শুরু করলাম।

কেনাকাটা শেষ করে বলাকা হলে মুভি দেখে রাত প্রায় নয়টা, মুভিটা দেখা মুনার মন ভালো রাখতে। কারণ মেয়েদের ছোট ছোট চাওয়াগুলোর গুরুত্ব দিলে তারা মহা খুশি হয়। এবং সঙ্গীকে মনে করে। সেই পুরুষটি সত্যিই তার সাথে উপযুক্ত। কথাগুলো শুনেছিলাম এক পরিচিত বড় ভাইয়ের কাছে। সিনেমা হল থেকে বের হয়ে মুনাকে বললাম, চলো আমরা ডিনারটা সেরে নিই। একটা ভালো রেস্টুরেন্ট এ ডিনার সেরে নিলাম।
আমি রেস্টুরেন্ট এর বিল দিতে গেলে মুনা বললো,
– মোটেই না। ওটা আমি দেব। এমনিতেই তোমায় খাটিয়ে মারছি। অন্তত খাওয়াতে তো দাও আমাকে।
– এতো অল্প তে সারলে তো হবে না।
– তাহলে?
– বাসায় দাওয়াত দিয়ে সেদিনের মতো আবারও খাওয়াতে হবে।
– আচ্ছা তাই হবে।
বিল মিটিয়ে আমরা বাসায় রওনা হলাম।

রুমে ঢুকতেই মুনা বললো
– বসো একটু কফি করে আনি।
আমি বললাম-
– না না তার দরকার নেই।
কিন্তু সে শুনলো না। সোজা রান্নাঘরে চলে গেলো। আমিও পেছন পেছন ঢুকলাম রান্নাঘরে। দেখি মুনা কফি বসানোর তোড়জোড় করছে। আমার দিকে পেছন করে দাঁড়িয়ে। আমি তার পেছনে গিয়ে একটু গা ঘেসে দাঁড়ালাম। সে কেমন যেন কাঠ হয়ে দাঁড়িয়ে গেলো।
আমি আস্তে আস্তে ওর ঘাড়ের কাছে আমার মুখটা নিয়ে গেলাম। বললাম ‘কফি খেতে ইচ্ছে করছে না। অন্য কিছু খেতে ইচ্ছে করছে’।
কোনো উত্তর দিলো না। আমি ওর কোমরটা ধরে ওর ঘাড়ে একটা চুমু দিলাম। সে থরথর করে কেঁপে উঠলো মনে হচ্ছে প্রথম কারো স্পর্শ পেলো। আমার দিকে ফিরে আমাকে ছাড়ানোর চেষ্টা করতে করতে বলতে লাগলো, ‘এটা কী হচ্ছে। এরকম করো না প্লিজ’।

কিন্তু ওর বাঁধা দেওয়াটা অতটা জোরালো মনে হলো না আমার। আমি ওর ঘাড়ের পেছন থেকে ধরে ওর ঠোঁটের মধ্যে আমার ঠোঁটটা চেপে ধরলাম। মুনা ছটফট করতে লাগলো। আমি ওর কোমরটা আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরে ওকে চুমু খেতে লাগলাম। মুনা ইচ্ছে করলেই আমার হাত ছাড়িয়ে চলে যেতে পারতো!

কিন্তু যাচ্ছে না। খালি মাথা নেড়ে বাধা করছে। মুখে কিছু বলতে পারছে না কারণ আমার ঠোঁট ওর ঠোঁটটা আটকে রেখেছে। ও ঠোঁটটা খুলছে না দেখে আমি ঠোঁটটা ছেড়ে দিলাম। ঠোঁট ছেড়ে দিয়ে ওর গলায় ঘাড়ে চুমু খেতে শুরু করলাম। মুনা বলতে লাগলো, ‘প্লিজ ছেড়ে দাও, এরকম করো না’। আমি ওর ঘাড়ে গলায় চুমু খেতে খেতে আমার হাতটা কোমর থেকে আস্তে আস্তে ওপরে তুলতে লাগলাম। আমার হাতটা ওর বুকের ওপর পড়তেই মুনার মুখ থেকে একটা আওয়াজ বের হলো আহঃ।

আমি সঙ্গে সঙ্গে ঘাড় থেকে মুখটা তুলে আবার ওর ঠোটটা চেপে ধরলাম। মুনার বাধা ক্ষীণ থেকে ক্ষীণতর হয়ে গেল। কিন্তু ও কোনো উদ্যোগ দেখালো না। আমি ওর মুখ থেকে মুখটা তুলে ওর দিকেই তাকালাম। দেখি ও চোখ বন্ধ করে রয়েছে। শরীরটা থরথর করে কাঁপছে যেন ওর। আমি বললাম
– তুমি কি সত্যি চাও না আমাকে
আমার গলা শুনে চোখ খুললো মুনা। বললো
– কিন্তু এটা তো ঠিক নয়।
আমি বললাম
– তাহলে চলে যাবো আমি?
– না না আমি কি তাই বলেছি?

কখন দু’জনেই ঘুমিয়ে পড়েছি জানি না। ভোর বেলায় ঘুম ভাঙলো। দেখি মুনা আমার বুকের ওপর মাথা রেখে শুয়ে আছে। দু’জনেই একটা চাদরের নিচে। চাদরের নিচে এক সুতো ও কাপড় নেই কারোর শরীরে। বাইরে তাকিয়ে দেখি আকাশ সবে ফর্সা হতে শুরু করেছে। এই ফ্ল্যাটটার আসেপাশে তেমন বড় বিল্ডিং নেই, বাইরের আকাশটা তাই পুরো দেখা যায়। বাইরের আলোর ঘরে এসে পড়াতে মুনা মুখটা দেখা যাচ্ছে। অঘোরে ঘুমাচ্ছে মুনা। আমি কপালে একটা চুমু দিয়ে উঠতে যেতেই মুনা আমার আরো জড়িয়ে ধরে শুয়ে পড়লো। আমিও আবার জড়িয়ে শুলাম। ওর ঠোঁটে একটা চুমু দিতেই চোখ খুললো। উম্মম্মম্ম মুনা চুপ করে শুয়ে থাকো। অনেকদিন পরে ভোরের এই আমেজটা এনজয় করছি। আমি জড়িয়ে ধরে ঘাড়ে একটা চুমু খেয়ে বললাম, ‘তুমি এনজয় করো। আমি আসছি ১০ মিনিট পর’।

আমি উঠে বাথরুম করে, ফ্রেশ হয়ে রান্নাঘরে ঢুকলাম। দুটো ব্ল্যাক কফি উইথ সুগার নিয়ে আবার বেডরুম এ ফিরলাম। দেখলাম মুনাকে যেমনভাবে রেখে গেছিলাম সে রকম ভাবেই শুয়ে আছে! জানলার পর্দাগুলো সরিয়ে দিয়ে মুনার কাছে গিয়ে একটা গালে চুমু খেয়ে বললাম। ‘গেট আপ নাউ ইউ স্লিপিহেড’। মুনা উঠে বসে আছে, আমাকে কফি আনতে দেখে বললো বাব্বা তুই তো বেশ সংসারী ছেলেরে! মুনা বিছানার চাদরটা জড়িয়ে উঠে বসলো। আমিও চাদরের মধ্যে গিয়ে ঢুকলাম। খাট এর ওপর দুজন হেলান দিয়ে বসলাম কফি হাতে।

মুনা আমার কাঁধে মাথা রেখে এক দৃষ্টিতে জানলার বাইরে তাকিয়ে রইলো। দু’জনেই কফি খেতে খেতে অনেকদিন পর সূর্যোদয় দেখলাম। একটা সময় সূর্য তার পরিচিত নিয়মে আমাদের জানালা পেরিয়ে ছুটতে লাগলো তার গন্তব্যে। আমাদের আজ কোনো গন্তব্য নেই, নেই কোনো অতীত আর ভবিষ্যৎ। তাই কফি শেষ হতে না হতেই আবারও পুরুষ হতে হতে হারিয়ে ফেললাম নিজেকে, মুনার বুকের ভেতরে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here